দেড় বছরের কাজ শেষ হয়নি পাঁচ বছরেও
নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
- আপলোড সময় : ১৪-০১-২০২৫ ০৭:৫৫:১৬ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৪-০১-২০২৫ ০৮:১৯:২৫ পূর্বাহ্ন
বাদল কৃষ্ণ দাস :: জামালগঞ্জ উপজেলার এক প্রোজ্জ্বল বিদ্যাপীঠ নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী বর্ধিত কলেবরে অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এরই লক্ষ্যে বিগত ২০২০ইং সনে ৩ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ নিয়ে বিদ্যালয়ের ৪তলা বিশিষ্ট একাডেমিক নতুন ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজ শেষ করার সময়সীমা ছিল বিগত ২০২১ইং সনের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে নির্মাণকাজের দায়িত্ব নেন ঠিকাদার অমল কান্তি চৌধুরী। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ করা শেষ করতে পারেননি ঠিকাদার। মেয়াদ শেষে এরপর চলে গেছে আরো তিন বছর। অথচ বিদ্যালয় ভবনটির নির্মাণ সমাপ্ত করে সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করার বাধ্য বাধকতা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার তা না করেই প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ ফেলে চলে গেছেন। এমনটাই অভিযোগ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এনিয়ে গত ০৩/১০/২০২৪ইং তারিখে একাডেমিক ভবন নির্মাণে ঠিকাদারের নানা অনিয়ম উল্লেখ করে নবীনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত চন্দ্র সরকার জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উক্ত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুশফিকিন নুর বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১১/১১/২০২৪ইং তারিখে ঠিকাদার অমল কান্তি চৌধুরী এবং জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সংযুক্ত করে দাখিলীয় অভিযোগকৃত আবেদনের আলোকে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রেরণ করেন জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সরেজমিনে গিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগে জানাযায়, নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন নির্মাণাধীন চার তলার ছাদ নি¤œমানের টাইলসের ছাউনি দিয়ে নির্মিত। তাই ছাদে টাইলসের ফাঁক দিয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হলে পানি পড়ে। অনেকাংশে টাইলস খসে পড়ে যাচ্ছে। চার তলা বিশিষ্ট ভবনের সকল শ্রেণিকক্ষের দরজা নি¤œ মানের কাঠ দিয়ে তৈরি করায় দরজা সাঁটানো যায় না। চার তলায় উঠানামা করার সিঁড়িতে যে হাতল লাগানো হয়েছে, তাও নি¤œমানের। ভবনের নিচ তলার গেইট বিয়ারিং ছাড়া লক করে ফেলে রাখায় এই গেইট খোলা যায় না। ভবন নির্মাণকাজে দেড় বছরের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল অভিযুক্ত ঠিকাদার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আজো পরিশোধ করেন নি। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ভবন নির্মাণকাজ স¤পূর্ণ সমাপন না করে এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভবন হস্তান্তর না করে চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে সাড়ে পাঁচশত শিক্ষার্থীর এই বিদ্যালয়ে নতুন বছরের শুরুতেই নতুন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর জন্য অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। যে কারণে নতুন ভবন কক্ষ ব্যবহার উপযোগী করে দেওয়ার জন্য একাধিকবার ঠিকাদার ও জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে ধর্ণা দিলেও কোন কাজ হয়নি। এ ব্যাপারে ঠিকাদার অমল কান্তি চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নির্মাণশ্রমিকদের গাফিলতির কারণে কাজে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। এগুলো ঠিকাদার হিসেবে সংশোধন অবশ্যই করবো। কিন্তু বিদ্যালয় ভবনটি হস্তান্তরের আগেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছেন। এটা সবাই জানেন। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই সকল ত্রুটি সংশোধন করা হবে। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ঠিকাদারকে কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। এরপরও যদি তিনি অভিযোগের সংশোধন না করেন তবে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুশফিকীন নুর বলেন, নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪তলা ভবন নির্মাণে নিম্মমানের কাজ করার অভিযোগ এবং সংশোধনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও শিক্ষা প্রকৌশলী বিভাগকে জানানো হয়েছে, যে সব বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে তা সমাধান করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ঠিকাদার যদি শেষ পর্যন্ত সংশোধন করতে নিতান্তই না আসেন, তবে তার জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করাসহ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগকে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মতামত দেওয়া হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ